• বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:২৫ অপরাহ্ন

‘পিটার হাসের কোম্পানি’ থেকে ১ লাখ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে সরকার

প্রতিনিধি / ১ পড়া হয়েছে
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ঘাটতি কমাতে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি আমদানি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহকারী মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে এই চুক্তি হয়েছে।

যার আওতায় ১৫ বছরে ধাপে ধাপে ১ লাখ কোটি টাকার এলএনজি সরবরাহ করবে কোম্পানিটি। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বর্তমানে মার্কিন এই কোম্পানির স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজর হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি রাষ্ট্রদূতের চাকরি ছেড়ে এক্সিলারেট এনার্জিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে কোম্পানিটির ব্যবসা ক্রমেই বড় হচ্ছে।

দেশে আলোচিত এক নাম পিটার হাস। বহুজাতিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জিতে যোগ দেওয়ার আগে বাংলাদেশে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২২ সালের মার্চে ঢাকার দূতাবাসের দায়িত্ব নেন। চাকরি ছেড়ে দেন ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই।

এমন সময় তিনি চাকরি ছাড়েন, যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে টালমাটাল বাংলাদেশ। এর কিছুদিন পর ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের দায়িত্ব পালনকালে দুই বছর পিটার ডি হাস দেশের মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নাগরিক সমাজের ভূমিকা নিয়ে সরব হওয়ার পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ইস্যুতে সরব ছিলেন।

এদিকে, চলতি মাসের শুরুতে পিটার হাস বাংলাদেশে আসেন। এসেই তিনি প্রথমে যান কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত এক্সিলারেট এনার্জির ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে (এফএসআরইউ)। পরে ৩ সেপ্টেম্বর তিনি পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাদের মধ্যে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।

সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে, সাড়ে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা) এলএনজি সরবরাহ করবে এক্সিলারেট এনার্জি। আগামী বছর থেকে ১৫ বছরব্যাপী ২৩২ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে মার্কিন এই বহুজাতিক কোম্পানি।

আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়েও মার্কিন এই কোম্পানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই খাতের অন্যান্য পণ্য, বিশেষ করে ডিজেল আমদানির কথাও ভাবছে সরকার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।

চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি ডিভিশন) প্রকৌশলী মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘সরকার দেশের গ্যাস সংকট কমাতে এলএনজি আমদানির ওপর জোর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবেই মার্কিন এই কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা হয়েছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনায় আরও বেশি মার্কিন পণ্য কেনার ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি করছে বাংলাদেশ।

ভবিষ্যতে কীভাবে দেশটি থেকে অর্থাৎ এক্সিলারেট এনার্জির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে এলএনজি আমদানি বাড়ানো যায়, তা নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলমের সঙ্গে কোম্পানির স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজর পিটার হাসের কথা হয়েছে।

একই সময় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ‘বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা নিরসনে জ্বালানি আমদানি’ নীতিপত্রেও বিষয়টি বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, চুক্তিটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশেষ বিধানের অধীনে করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের বিশেষ বিধানের অধীনে থাকা একাধিক চুক্তি বাতিল করলেও এটি করেনি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মার্কিন এই কোম্পানির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ায় আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে সেটি বাতিল করা যায়নি।

চুক্তি অনুযায়ী, এক্সিলারেট এনার্জি ২০৪০ সাল পর্যন্ত বছরে শূন্য দশমিক ৮৫ থেকে এক মিলিয়ন টন (এমটিপিএ) এলএনজি বাংলাদেশে সরবরাহ করবে। এর মধ্যে ২০২৬-২৭ সালে ২৮টি কার্গো আমদানি করা হবে। পরে ২০২৮ থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত বছরে ১৬টি করে কার্গো আসবে।

এতে গড় বার্ষিক খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ছাড়াও এক্সিলারেট স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি সরবরাহ করছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৩৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ১৬টি কার্গো এলএনজি সরবরাহ করেছে কোম্পানিটি। ভবিষ্যতে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বছরে ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বেশি স্পট কার্গো সরবরাহ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

শুল্ক ঘাটতি কমাতে ঢাকার নীতিপত্র: ‘বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা নিরসনে জ্বালানি আমদানি’ শীর্ষক নীতিপত্রে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত ক্রয় বৃদ্ধির সুযোগ বাংলাদেশের বর্তমান জ্বালানি আমদানিতেই রয়েছে। বিশেষ করে প্রাথমিক জ্বালানি, মূলত এলএনজি এবং পেট্রোলিয়াম পণ্যের (অপরিশোধিত তেল, পরিশোধিত তেল, এলপিজি ইত্যাদি) ওপর নির্ভরশীল।

নীতিপত্রের সুপারিশে বলা হয়েছে, ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনায় মার্কিন পরিশোধকদের অন্তর্ভুক্ত করতে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) আমদানি প্রক্রিয়া ব্যবহার করা। মার্কিন গালফ কোস্ট রিফাইনারি থেকে ডিজেল এবং জ্বালানি তেলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বা টেন্ডার নিয়ে আলোচনা করা।

বছরে মাত্র শূন্য দশমিক ২ মিলিয়ন টন মার্কিন উৎস থেকে প্রাপ্ত ডিজেল (প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার) অত্যন্ত উপকারী হবে। একইভাবে, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান এলপিজি চাহিদা মেটাতে মার্কিন সরবরাহকারীদের সঙ্গে এলপিজি কার্গোর জন্য টেন্ডার শুরুর সুপারিশ করা হয়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ রকম আরো সংবাদ...
https://slotbet.online/