• রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

খালাসের পরেও জামিন মেলেনি, ১৬ বছর পর বাবার স্পর্শ পেলেন সন্তান

প্রতিনিধি / ২৭ পড়া হয়েছে
প্রকাশিত : শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বিডিয়ারের সাবেক ল্যান্স নায়েক মো.মঞ্জুরুল ইসলাম (৫৫)। গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকার কেরনিগঞ্জের কারাগার থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পান।মুক্তি পেয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর নিজ সন্তানদের বাবার স্পর্শ দিতে পেরে আনন্দে আত্মহারা তিনি।

মঞ্জুরুল ইসলামের মুক্তিতে আনন্দে ভাসছে পুরো গ্রাম। মো.মঞ্জুরুল ইসলামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালিশুরী ইউনিয়নের কবিরকাঠী গ্রামে। মঞ্জুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বাড়ি পৌঁছালে গ্রামের নারী-পুরুষ ও স্বজনেরা তাকে দেখতে আসেন।

কেউ কেউ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, আবার মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছেন। ওই এলাকায় যেন আনন্দের বন্যা বইছে। কালিশুরী ডিগ্রী কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মো. খালিদুর রহমান এসেছেন ফুল ও মিষ্টি নিয়ে।

তিনি বলেন,‘মঞ্জুরুল ইসলাম তার বন্ধু। খুবই ভালো মানুষ। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকার নিজেদের দোষ যাতে প্রকাশ না পায়, সেই উদ্দেশ্যে নিরাপরাদ বিডিআর সদস্যদের কারাগারে রেখে অবিচার ও জুলুম করেছেন।

এরও বিচার হওয়া উচিৎ।’ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বিচারের আগ পর্যন্ত জেল খানায় থাকাকালীন আদালতে আনা নেওয়া ছাড়া তারা সূর্য্যরে আলো দেখতে পেতেন না। জেলাখানার মধ্যে কক্ষের বাহিরে যেতে দেওয়া হত না।

রিমান্ডে নিয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানও তাকেসহ অন্যদের মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন করেছিলেন। খুবই মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, যখন আত্মসমর্পন করি তখন সাড়ে তিন বছর ও সাত বছরের দুটি কন্যা সন্তান রেখে যাই। তার অবর্তমানেই বড় মেয়ে পলি আক্তারের ২০১৭ সালে বিয়ে হয়।

তার সাত বছরের ছেলে মশিউর রহমান ও পাঁচ দিনের একটি কন্যা হয়েছে। আর সাড়ে তিন বছরের শাহানা আক্তার মনি এখন ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কারাগারে থাকাকালীন মা আমিনজান বিবি, ভাই মো. দুলাল, দুই বোন রাহেলা বেগম ও ফোকন বিবি, চাচী হনুফা বিবি মারা গেছেন। কারো লাশ পর্যন্ত দেখতে পারেননি। আজ মা বেঁচে থাকলে তিনি সবেচেয়ে বেশি খুশি হতেন।

ছোট মেয়ে শাহানা আক্তার মনি (২০) বলেন,‘বাবা কেমন তা বোঝার আগেই তিনি তাকে ছেড়ে কারাগারে চলে যান। সেই থেকে ১৬ টি বছর বাবাকে কাছে পাননি, আদর-সোহাগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, বাবাকে স্পর্শ করতে পারেননি।

বাবা যখন গতকাল বুধবার জেল থেকে বের হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছিল, আর কান্না করছিল সেই অনুভ‚তির কথা বোঝানোর মত ভাষা তার জানা নেই।’ স্ত্রী নিলুফা বেগম (৫০) বলেন,‘আমি স্বামী পেয়েছি, সন্তানেরা তার বাবাকে ফিরে পেয়েছে।

আমার আনন্দের অনুভ‚তি প্রকাশ করার মত ভাষা জানা নাই।’ মঞ্জুরুল ইসলাম ২০০৯ সালের ৩ মার্চ পিলখানায় আত্মসমর্পন করেন। তাকে প্রথমে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়।ওই মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদÐ দেন। পরে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর বেকসুর খালাস দিলে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পরে আটক দেখানো হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ রকম আরো সংবাদ...
https://slotbet.online/