• রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৫২ অপরাহ্ন

এক দশক ধরে পরিত্যক্ত পিরোজপুর আবহাওয়া অফিস

প্রতিনিধি / ০ পড়া হয়েছে
প্রকাশিত : রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: পিরোজপুরের কাউখালীতে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় প্রথম শ্রেণির নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র। কিন্তু এটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে গণপূর্ত বিভাগ ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। কেন্দ্রটি নির্মাণে ৯০ লাখ টাকা ব্যয় হলেও অফিসের যন্ত্রপাতির হিসেব এখনো অজানাই রয়ে গেছে।

মূল ভবনের নির্মাণ শেষ হয় ২০১২ সালে এবং হস্তান্তর করা হয় ২০১৬ সালে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে কিছু সীমিত জনবল নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা নিয়মিত অফিসে আসেন না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। নির্মাণের ৫ বছর পর আনসার নিয়োগ দেওয়া হলেও ছয় বছরেও প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো কার্যকর জনবল নিয়োগ হয়নি। এমনকি যে আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তারও দেখা মেলে না নিয়মিত।

সম্প্রতি সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রটির মূল ফটকে তালা ঝুলছে। পাশের পকেট গেট থেকে অফিসে প্রবেশ করে দেখা যায় অফিস থাকলেও নেই সেবা, নেই কর্মচারীদের উপস্থিতি ও কার্যক্রমের কোনো চিহ্ন। অফিস কক্ষগুলোতে বসার টেবিল সরিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিছানা, আর অফিসের আসবাবপত্র রাখা হয়েছে বাইরে। অফিস কক্ষে দড়ি টানিয়ে শুকানো হচ্ছে জামা কাপড়, চলছে রান্নাবান্নাও।

অফিস কক্ষগুলো যেন রীতিমতো একটি আবাসিক হোটেলে রূপ নিয়েছে। যেসব যন্ত্রপাতি প্রাথমিকভাবে বসানো হয়েছিল, সেগুলো এখন অব্যবহৃত। সরকারি দপ্তরের এমন দায়সারা মনোভাব এবং অনিয়মের কারণে এই কেন্দ্রটি কার্যকারিতার বাইরে চলে গেছে বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, অফিসটির কর্মচারীদের দেখা যায় ‘কালেভদ্রে’। তাদের দাবি, অবিলম্বে কেন্দ্রটি সক্রিয় করে নৌরুটে যাতায়াতকারীদের সঠিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘সাত থেকে আট বছর ধরে আমি এখানে বসবাস করছি। কিন্তু আমি কখনো সামনের গেট পর্যন্ত খুলতে দেখি নাই। মাঝে মধ্যে দুজন আনসারকে দেখা যায়। আবহাওয়া অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আমার চোখে পরে নাই।’

রিয়াদুল ইসলাম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এই পথে প্রতিদিন যাতায়াত করি। কখনো এই অফিসের কোনো কার্যক্রম দেখি নাই। পিরোজপুর জেলার একমাত্র আবহাওয়া অফিসটি আমাদের খুব প্রয়োজন।’ব্যবসায়ী সোয়াইব সিদ্দিক বলেন, ‘পিরোজপুর জেলা মূলত একটি উপকূলীয় অঞ্চল এবং নদীবেষ্টিত এলাকা।

এখানে একটি আবহাওয়া অফিস আছে, কিন্তু আমরা কখনো এর কোনো সুফল পাইনি। এই অফিসে কোনো কার্যক্রম হয় না, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আসে না। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে অনতিবিলম্বে অফিসটির কার্যক্রম শুরু করা হয়।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে কাউখালী একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। এখান থেকে দুটি নদী দুই রুটে বিভক্ত হয়েছে। একটি বরিশাল হয়ে ঢাকা এবং অন্যটি স্বরূপকাঠী হয়ে সন্ধ্যা নদী দিয়ে ঢাকা। ফলে এই জায়গাটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র থাকার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে নির্মিত অফিসটির এমন বেহাল অবস্থা দেখে হতাশ স্থানীয়রা বলছেন, সরকার কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবে কোনো সেবা মেলে না এখানে। বরং অফিসটা যেন এক পরিত্যক্ত ভবন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজেদুল হক বলেন, ‘আগের বিষয়ে কিছু জানি না। তবে, গতবছরের নভেম্বরের ৫ তারিখ থেকে আমি এখানে যোগদানের পর থেকে নিয়মিত অফিস চলছে। যত রকমের যন্ত্রপাতি আছে, সেগুলো নিয়মিত সংগ্রহ করছি।

তবে কিছু কিছু যন্ত্রপাতি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ আছে। সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’ অফিস কক্ষে বিছানা রাখার বিষয়ে মাজেদুল হক বলেন, ‘আমাদের যেহেতু ২৪ ঘণ্টা অফিস করতে হয়। সেজন্য রাতে যে থাকবেন, তার বিশ্রামের জন্য এটা তৈরি করা হয়েছে। তার বাইরে কিছু নয়।’

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ রকম আরো সংবাদ...
https://slotbet.online/